বশির আলম
টঙ্গীতে গর্ভের শিশুর হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করে আসামীদের হুমকিতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্বামীর বাড়ী ছেড়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন ভুক্তভোগী নারী খাদিজা।
ঘটনাটি ঘটেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ৪৯নং ওয়ার্ড টঙ্গী এরশাদ নগর এলাকার ৬নং ব্লকে।
ভুক্তভোগী নারী খাদিজা জানায়, শুশুড় বাড়ির ভাসুর, ভাসুরের স্ত্রী, ননদের মারধরের কারণে তার গর্ভের শিশু মারা যায়। শিশুকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন তিনি। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপোর্ট ও পিবিআই’র তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। মামলা দায়েরের পরে বিজ্ঞ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি করে। গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্বেও আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তাদেরকে প্রাণনাশ সহ নানাবিধ হুমকিধামকি দিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সে। চাপে পড়ে নিরাপত্তাহীন হয়ে স্বামী নিজাম ও সন্তানদেরকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠতে বাধ্য হয় তারা। স্বামীর পৈতৃক বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় উঠলেও নিস্তার মেলে নাই তাদের। ভাসুর কাউসারের নির্দেশে কতিপয় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা কিছুদিন আগে ভোরে অটোরিক্সা থামিয়ে তার স্বামী নিজামকে মারধর করে এবং মামলা তুলে না নিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। স্থানীয় লোকজন নিজামকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে টঙ্গী পূর্ব থানায় অভিযোগ করতে গেলে একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, ভাসুর কাউসার তার মা রানী বেগম স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে খাদিজা ও নিজাম মামলা তুলে নিলে বাড়িতে ঢুকতে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলে খাদিজার শাশুড়ী নিজামের মা রানী বেগম বাদী হয়ে আদালতে ছোটো ছেলে নিজামের নামে চুরি, ছিনতাই, মাদকের টাকার জন্য ভাঙচুরের মামলা করে। গত বৃহস্পতিবার নিজাম আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নিজামকে আটকের নির্দেশ দেয়। নিজাম আটক হলে মা রানী বেগম খাদিজাকে তার মামলা তুলে নেয়ার শর্তে নিজামের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দেয়।
খাদিজা জানায়, অটোচালক স্বামী নিজামের অনুপস্থিতিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাসুর কাউসার। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সন্তান হত্যার আসামীরা বাইরে, উল্টো স্বামী কারাগারে। ভয়, উৎকন্ঠা আর হতাশায় কোনো করনীয় খুঁজে পাচ্ছেনা খাদিজা। মামলার অন্যতম আসামি ভাসুর কাউসার ও শাশুড়ী রানী একজোট হয়ে মামলাটি তুলে নিতে খাদিজাকে হুমকি ধমকিসহ নানাবিধ হয়রানি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী একজন জানান, রানী পূর্বে যা-ই করেছে কিন্তু এখন বয়স হয়েছে। নিজের বড় ছেলে, ছেলের বউ ও মেয়ের উপযুক্ত বিচার করে ছোটো ছেলে নিজামের স্ত্রী খাদিজার কষ্ট কমাতে পারতো। শোনা যায় কাউসারের অদৃশ্য অর্থ এবং রানীর প্রবাসের টাকার অহংকারে খাদিজার প্রতি জুলুম করে যাচ্ছে। বড় ছেলে কাউসার মামলা থেকে রেহাই পেতে, পৈতৃক বাড়িঘর একাই ভোগদখল করতে এবং ছোটো ভাই নিজামের স্ত্রী খাদিজাকে ঘরছাড়া করতে তাদের এ অত্যাচার।
প্রতিবেশী সরকারি স্কুল শিক্ষক প্রবীণ মুরুব্বি মোঃ মজিবর রহমান মাস্টার সংবাদকর্মীদের বলেন, রানী বেগম নিজামদের পৈতৃক বাড়িঘর নিয়ে ঝামেলা মিমাংসা করে নিজামের স্ত্রী খাদিজার মামলাটি স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে আমাদের কাছে এসেছিলেন। নিজাম চুরি ছিনতাই করে কিংবা টাকার জন্য ভাঙচুর করে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। এলাকাবাসী নিজামের পাশে দাঁড়াতে সাংবাদিকসহ সকলকে আহবান জানান।
এদিকে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে খাদিজা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি স্বামী সন্তান নিয়ে দূরে চলে যাবো, “আমি বাঁচতে চাই। কাউসার ও তার বউ আর বোন সবাই মিলে আমার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছে। সব কাউসারের ষড়যন্ত্র। সে একা বাড়িঘর দখল করে আমার সংসার ভাঙতে চায়। সে আমাকে স্বামী সন্তান নিয়ে বাঁচতে দিবে না। সমাজের বিজ্ঞবান মানুষ ও প্রশাসনের কাছে তার গর্ভের শিশুকে হত্যার বিচার ও হয়রানি বন্ধে আকুল আবেদন জানান ভোক্তভোগী নারী ও তার পরিবার
Leave a Reply