দৈনিক ভোরের আলোবিডি ডটকম
নাট্য ব্যক্তিত্ব ও দেশ নাটকের কর্ণধার এহসানুল আজিজ বাবুকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর মেট্রো থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন/২০০৯ এ দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে জিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর বুধবার তাকে গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজির করে আরো তথ্য প্রমাণ উদঘাটনের জন্য পুলিশ তার দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন আদালত উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রয়ারীতে সমাপ্ত হওয়া তাবলীগ জামাতের বিশ্ব এস্তেমার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এস্তেমায় জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ঘটনাটি তখন লাখ লাখ মুসুল্লীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি সাইবাইর টিমের সহযোগিতায় হুমকিদাতা আলামিন হোসেন নামের এক যুবলীগ কর্মীকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর শিমুলতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি প্রদান করে। তার স্বাকারোক্তি ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সদর মেট্রো থানার এসআই মাসুদ আনোয়ার আকন্দ বাদী হয়ে সদর মেট্রো থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন/২০০৯ এ একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ রনি সরকার, সাইফুর রহমান শাওন, সিয়াম হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য, তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ঘটনা জড়িত থাকার অভিযোগে এহসানুল আজিজ বাবুকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনকালে সাইবার পেট্রোলিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে মোঃ আলামিন হোসেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড যথা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত, জনমনে আতংক সৃষ্টি এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অন্যান্য আসামীদের যোগসাজোসে উপরোক্ত কর্মকান্ড করছে। প্রাপ্ত সংবাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে মৌখিক অনুমতিক্রমে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বিকালে জিএমপি সদর থানাধীন শিমুলতলী এলাকা মোঃ আলামিন হোসেনকে উক্ত ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার স্মার্ট মোবাইল ফোন, ব্যবহৃত সিম পর্যলোচনা করে দেখা যায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মোঃ আলামিন হোসেন তার মোবাইলের ফেইজবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ “চুমকি আপার সৈনিক” থেকে পোষ্ট দেয় যে, “আগামীকাল গাজীপুরে জঙ্গী হামলা হবে জুম্মার নামাজের পর এমন তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। গাজিপুরে যারা আছেন এই মেসেজটি সবাইকে জানিয়ে দেন” সন্দেহজনক লিংক গুলো পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে সে রনি সরকারসহ কতিপয় ব্যাক্তির নাম বলে। পরে এলআইসি শাখা মোবাইল পর্যালোচনা করত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”, “মুজিব ভাই”, “আওয়ামীলীগ যুব লীগ” এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ-১. “জুম বিগ্রেড” (আমেরিকান প্রবাসী রাব্বি ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর উক্ত গ্রুপের এডমিন ও অর্থ দাতা), ২. “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যুব লীগ সহ অনেক গুলো সাব-গ্রুপ (ক্রিয়েটর রনি সরকার) সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত রনি সরকার আসামী আলামীনের সহযোগী। উক্ত গ্রুপের এডমিন ও নিরাপত্তা সেটিং এর দ্বায়িত্বে ধৃত আসামী আলামিন। এ গ্রুপের সদস্যরা এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন সাইবার অপরাধ করছিল। গ্রুপগুলো বিশ্লেষণ পূর্বক মোঃ আলামিন হোসেন (৩৩) কে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা চালিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করতে সহায়তা করার কারণে মোঃ রনি সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত আসামী মোঃ আলামিন হোসেন ও অন্য আসামীরা অনলাইন গ্রুপগুলো পরিচালনা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকালাপ করার নির্দেশনা প্রদান করে এবং সে নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক ভিডিও বার্তা প্রচার করে।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মোঃ আলামিন হোসেনের মোবাইল হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, আসামীগণ ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের হতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপরোক্ত লিংক পেজ ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের উপরে হামলা, আক্রমন, গুলি বর্ষণসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমা/২০২৫ চলাকালীন ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের মধ্যে এবং গাজীপুর মহানগরের সাধারণ জনগনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি সহ জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আইন শৃংখলার পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অনলাইন ভিত্তিক অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে, অর্থায়ন করে, অপরাধ সংঘঠনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। যা সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ সংশোধনী ২০১৩ এর ০৬/০৭/১০ ধারার অপরাধ।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, গ্রেফতার আসামীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল ফোন ও তাদের দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ও পলাতক আসামীরা রাষ্ট্রবিরোধী ও জননিরাপত্তার হুমকিমুলক বিভিন্ন কাজে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
এদিকে, নাট্যকার এহসানুল আজিজ বাবুকে গ্রেফতার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি পোস্ট দিয়েছেন। তারা তার মুক্তি দা্বী করেছেন।
Leave a Reply