1. admin@dainikvoreralobd.com : voreralobd :
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
গাজীপুরে বলাৎকারের অভিযোগ এনে সকালে ইমামকে গণপিটুনি, রাতেই কারাগারে মৃত্যু জাল সনদে চাকরি: কাপাসিয়ায় দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের এমপিও স্থগিত গাজীপুরে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন গাজীপুরে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটার দায়ে ১০ জনের কারাদণ্ড গণধোলাইয়ের শিকার ইমামের কারাগারে মৃত্যু পহেলা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয় বুড়িমারী আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন গাজীপুরে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে বড় ভাইয়ের হুমকিতে এলাকাছাড়া ছোট ভাইয়ের সংবাদ সম্মেলন গাজীপুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদকর্মী লাঞ্ছিত পূবাইলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শিশুকে বলাৎকার, ইমাম গ্রেফতার

বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাওয়া চাকুরীতে বহাল ইউএনও

  • প্রকাশিত : বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
  • ৯৯৩ বার পাঠ করা হয়েছে

ভোরের আলো রিপোর্ট:
বিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায়’ প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান আবু বকর সরকার। ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ ধরা পড়ে চার বছর আগে বাবার ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’ বাতিল হয়ে গেলেও সরকারী চাকরিতে রয়েছেন ছেলে। অতীতে আওয়ামী পরিবারের লোক পরিচয়ে নানা সুবিধা নেন আবু বকর। ৫ আগষ্টের পর গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ‘বঞ্চিত কর্মকর্তা’ পরিচয়ে বাগিয়ে নেন ঢাকার সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদ। আবু বকর সরকার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকার মো. আবদুর রউফ সরকারের ছেলে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন মো. আবু বকরের বাবা রউফ সরকার। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রউফ সরকারের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিও লেটার দেন। ডিও লেটারে চুমকি সুপার করে লিখেন, ‘আবদুর রউফ সরকার ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীণতা যুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীণতা সংগ্রামে সংক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভুলবশত তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তার নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য জোর সুপারিশ করছি’। চুমকির ডিও লেটারের পর তড়িৎগতি পায় রউফ সরকারের আবেদন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম (অব:) রউফ সরকারের আবেদনটি সভায় পেশ করার জন্য ২৮ মার্চ জামুকার ডিজিকে নোট দেন। ২০১৩ সালে আবদুর রউফ সরকারের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এদিকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৭ সালে ৩ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটায় রউফ সরকারের ছেলে মো. আবু বকর সরকারকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকনমিক) ক্যাডারে সহকারী প্রধান পদে নিয়োগ দেন। নিয়োগপত্রের শর্তে উল্লেখ করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই বাছাই কালে মিথ্যা বা জাল প্রমাণতি হলে নিয়োগ বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রউফ সরকারের নাম দেখে এবং ভাতা গ্রহণ করার বিষয়টি জানাজানি হলে গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পূবাইলসহ গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির প্রেক্ষিতে সরকারের একাধিত তদন্তে প্রমাণিত হয় রউফ সরকার একজন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২১ সালের ১১ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে রউফ সরকারের নাম বাতিল করে।

এ প্রসঙ্গে পূবাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ বলেন, যখন দেখলাম আব্দুর রউফ সরকার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে এবং এলাকায় মুক্তিযোদ্ধার লোগো লাগিয়ে ঘুরাফেরা শুরু করেছে। তখন থেকে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছি। অথচ নিজেকে আওয়ামী লীগ দাবি করা আব্দুর রউফ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তৎকালীন সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির সুপারিশে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রউফ সরকারের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা আমরা জানি না।

তাই আমরা পুবাইলসহ গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে রূপ সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সাক্ষী দিয়ে আসি। পরবর্তীতে ২০২১ সালে রউফ সরকারের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। দুঃখের বিষয় বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেওয়া ছেলে চাকরিতে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। সে বর্তমানে সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি একজন মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে আবেদন যত দুর সম্ভব আবু বকর সরকারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাল জালিয়াতের অভিযোগের শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি করছি।

পূবাইলের খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন সরকার বলেন, আবু বকর সরকার কিভাবে একজন বিসিএস অফিসার হলো তা আমার বোধগম্য নয়। সে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ক্ষমতার দাপটে জোরপূর্বক জবরদখল করে। তাতে আমি বাধা দিলে সে তৎকালীন ডিআইজি ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান হাফিজুর রহমান(আবু বকরের মামা)প্রভাব খাটিয়ে আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। শুধু তাই নয় আবু বকর সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু অসৎ অফিসারের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে।

এমন কি সে খিলগাও এ সরকারি হালটের জমি দখল করে নিজের বাড়ির আঙিনা হিসেবে ব্যবহার করছে। সে এলাকার আওয়ামী লীগ,শ্রমিক লীগ,ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদেরকে তার এই সমস্ত অসৎ কাজে ব্যবহার করেছে। তার বাবা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত বলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুপারিশ করেছে। তার বাবা আব্দুর রউফ সরকার এক সময়ে বাটা সু কোম্পানিতে চাকরি করতো,সে কখনোই মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করে নাই, শুধুমাত্র তার ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্যই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করান।

যার ফলশ্রুতিতে আমি এবং জনৈক নূর মোহাম্মদ কাজী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করি। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল যাচাই-বাছাই শুনানি সাক্ষী সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আব্দুর রউফ সরকারের মুক্তিযোদ্ধ সনদ বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে। যখন দেখলাম আব্দুর রউফ সরকারের ছেলে আবু বকর সরকার সরকারি চাকুরীতে বহাল রয়েছে তখন পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবু বকর সরকারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য পুনরায় অভিযোগ করি।
কিন্তু নিজের মুক্তিযোদ্ধা সনদ টেকাতে বাদী হয়ে আব্দুর রউফ সরকার মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৬১৩৮/২০২১। ওই মামলায় বিবাদী হন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

মামলার সর্বশেষ শুনানির দিন ধার্য ছিল ০৪/০১/২০২৩ ইং তারিখে। মামলার সর্বশেষ রায় দেন বিচারপতি মাহমুদুল হক ও মাহমুদ হাসান তালুকদার। এরপর ওই মামলার রায়ের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের কোন আপিল করেন নাই আব্দুর রউফ সরকার। এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সরকার বলেন, এগুলো সব মিথ্যা, আপনি সময় করে সাভার আমার অফিসে আসেন অথবা ঈদের আমার বাড়িতে এসে দেখা করেন। তিনি আরও বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এদিকে দৈনিক ভোরের আলো অনলাইন ভার্সনে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সরকার। উপরমহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে ফোনের পর ফোন আসে পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রতিনিয়ত এভাবে বিভিন্ন মহল থেকে ফোন করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবী করেন ভোরের আলো কর্তৃপক্ষ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি